10-Best-And-Healthy-Vitamin-D-Rich-Food-Sources

এ সময়ে আলোচিত ভিটামিন ডি Leave a comment

ভিটামিন ডি

কোভিড-১৯ মহামারির এ সময়ে শরীর সুস্থ রাখতে ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডির ভূমিকা ও গুরুত্ব নতুন করে আলোচিত হচ্ছে। ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, যা ‘সানশাইন ভিটামিন’ হিসেবে পরিচিত।

শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি তৈরি হলে তা দেহের অভিযোজিত রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ত্বরান্বিত করে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধক উপাদান টি-সেল ও অ্যান্টিজেন–সমৃদ্ধ কোষগুলো সক্রিয় হয় এবং দেহকে বাইরের রোগজীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয়। ভিটামিন ডি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও ইমিউনোরেগুলেটরি উভয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যা দেহের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে সক্রিয় করার জন্য অপরিহার্য। তাই ভিটামিন ডির ঘাটতিতে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ যেমন, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ অনেক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

গবেষণা

গবেষণা বলছে, দেহে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকলে তা ‘সাইটোকিন স্টর্ম’ নামের প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয়; ফলে এই অতিরিক্ত সাইটোকিন দেহের কোষকলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে সংক্রমণের হার বাড়ায়। এই সাইটোকিন একধরনের প্রোটিন যা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভিটামিন ডি স্টেরয়েড হরমোন হিসেবে জিন এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে; অর্থাৎ দেহের প্রোটিন তৈরিতে নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় থাকে। আর প্রোটিন দেহে মজবুত রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলার মূল ভিত্তি।

সাম্প্রতিক সময়ের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বিশ্বজুড়ে কিছু জরিপে দেখা গেছে, যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশেরই শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি রয়েছে।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়ানো ছাড়াও ভিটামিন ডি দেহের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—দাঁত, হাড় ও মাংসপেশিকে সুস্থ রাখা। পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকলে দেহে ক্যালসিয়ামের শোষণ ও হাড়ের মিনারালাইজেশন ব্যাহত হয়, যা হাড়ক্ষয়ের সূচনা করে। এর অভাবে শিশুরা রিকেটসে ও প্রাপ্তবয়স্করা অস্টিওম্যালেসিয়াসহ বিভিন্ন হাড়ের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

ভিটামিন ডি রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের সঠিক মাত্রা বজায় রাখে, যা দেহের স্বাভাবিক মাংসপেশির সংকোচন, স্নায়ুর উদ্দীপনা পরিবহন, হাড়ের মিনারালাইজেশনসহ দেহকোষের সার্বিক কার্যকারিতায় সাহায্য করে। এ ছাড়া ভিটামিন ডি দেহে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে, বিষণ্নতা, আলঝেইমার, খিটখিটে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতেও ভিটামিন ডি প্রয়োজন। গবেষকদের দাবি, বিষণ্ন ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দিলে উন্নতি লক্ষ করা যায়।

কীভাবে পাবেন ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি মূলত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, অর্থাৎ সূর্যালোকে থাকে এবং চামড়ার ওপরের ভাগ থেকে শরীরে প্রবেশ করে। সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে এলে শরীর নিজেই ভিটামিন ডি তৈরি করতে শুরু করে। কোনো কারণে ব্যক্তি দিনের পর দিন সূর্যের আলোর সংস্পর্শে না এলে ভিটামিন ডির অভাব হতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অভ্যন্তরে ভিটামিন ডি কার্যকর হওয়ার জন্য কিডনি ও যকৃতের সুস্থতা দরকার হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের দেহেই ভিটামিন ডির অভাব রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে দিনের বেলা বাইরের থেকে অভ্যন্তরে, যেমন বাড়ি বা অফিসে আমরা সময় বেশি কাটাই। কোভিড অতিমারিতে শিশু ও বয়স্করা বাড়ির বাইরে প্রায় যাননি বলা যায়। তাই এ সময় ভিটামিন ডির অভাব আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় কাটালে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ইউনিট ভিটামিন ডি দেহ গ্রহণ করতে পারে।

খাবার থেকে মানবদেহ ৩০ শতাংশ ভিটামিন ডি গ্রহণ করে, কিন্তু বর্তমানে ডায়েট সচেতন অনেকেই কোলেস্টেরল–সমৃদ্ধ খাবার পুরোপুরি ত্যাগ করেন। দেহে ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে হলে সুষম ডায়েটে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর স্নেহজাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ভিটামিন ডি পেতে পারি।

খাবারে তেলের ব্যবহারের দিকে নজর রাখতে হবে। সাধারণত ডিমের কুসুম, পনির, তেল, ঘি, কডলিভার অয়েল বা কড মাছের তেল, কাঠবাদামের দুধ, ফর্টিফায়েড সিরিয়াল ও জুস, টক দই, সামুদ্রিক ও চর্বিযুক্ত মাছ, রোদযুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রাণীর মাংস, সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার, গরুর কলিজা, রোদে বেড়ে ওঠা মাশরুম ইত্যাদি থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যেতে পারে। ফর্টিফায়েড ফুড সেই অভাব দূর করতে পারে। ভিটামিন ডি–সমৃদ্ধ ফর্টিফায়েড খাবার হলো পাউরুটি, সিরিয়াল, দুধ, পনির, সয়াফুড ও কমলালেবুর জুস।

কীভাবে বুঝবেন

ভিটামিন ডির অভাবজনিত উপসর্গ তেমন স্পষ্ট বোঝা যায় না। তবে ক্লান্তি ও দুর্বলতা, চুল পড়া, ঘন ঘন সর্দি–কাশি ও অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা, ক্ষত পূরণে দেরি, কাজে আগ্রহ কমে যাওয়া, বিষণ্নতা দেখা দেয়, মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। রক্তে ভিটামিন ডির মাত্রা নিরূপণ করা যায়।

কারা বেশি ঝুঁকিতে  আছেন?

বয়স্কদের চামড়ার নিচে চর্বি বা কোলেস্টেরল কমে গেলে তাঁরা দ্রুত ভিটামিন ডির ঘাটতিতে আক্রান্ত হন। বয়স্করা বাড়িতে থাকেনও বেশি। ত্বকে মেলানিন বেশি থাকলে আলট্রাভায়োলেট ঢুকতে পারে না, এ ক্ষেত্রেও ভিটামিন ডির ঘাটতি হয়। এ ছাড়া ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহারে, রোদ পৌঁছায় না এমন জায়গায় বসবাস, স্থূল শিশু-কিশোর যাদের ত্বকের বিভিন্ন স্থানে কালো অংশ দেখা দিচ্ছে, ধর্মীয় বা অন্য কারণে পোশাকে প্রায় সারা দেহ আবৃত করে রাখা ব্যক্তি, সারাক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক জীবন যাপন (হোস্টেল, হাসপাতাল বা অফিস) করেন এমন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে আছেন।

কতটুকু চাই

১ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের গড়ে প্রতিদিন ৬০০ আইইউ এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের ৮০০ আইইউ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা দরকার। এই চাহিদা যদি স্বাভাবিকভাবে পূরণ না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। বয়স্ক ব্যক্তি, মেনোপজ হয়ে গেছে এমন নারী, কিডনি রোগীর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।

ফাহমিদা হাশেম

জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ,

ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *