গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই অস্থির। গরমের কারণে অনেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন—যেমন পানিস্বল্পতা, প্রস্রাবে সংক্রমণ, হিট স্ট্রোক, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, আমাশয়, গরমজনিত সর্দি–কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও জন্ডিস। তাই গরমের দিনগুলোতে সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।
পানিস্বল্পতা:
গরমে অতিরিক্ত ঘামার কারণে দেহ থেকে প্রয়োজনীয় পানি বেরিয়ে যায়, ফলে পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তাই গ্রীষ্মে তরল খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সব তরলের মধ্যে পানি শ্রেষ্ঠ।
এই সময় দৈনিক দু-তিন লিটার বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, লেবুপানি, কাঁচা আমের জুস, বেলের শরবত, মাঠা, চিনি ছাড়া তাজা ফলের রস ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করতে হবে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত চিনি দেওয়া সফট ড্রিংকস, জুস, চা, কফি দেহকে আরও পানিশূন্য করে।
প্রস্রাবের সংক্রমণ:
এ সময়টায় প্রস্রাবের সংক্রমণ খুব বেশি দেখা দেয়। এ সমস্যায় অ্যাসিডিক বা টক ফল কম খেতে হবে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল খাবার, যেমন দারুচিনি, রসুন, মধু খুব ভালো কাজ করে।
হিট স্ট্রোক:
প্রচণ্ড গরমে অনেকই হিট স্ট্রোক করেন। ডাবের পানি, লাউ-পেঁপের পাতলা ঝোল, করলা, তরমুজ, বার্লি—এই খাবারগুলো গ্রহণ করলে শরীরে দীর্ঘ সময় পানির মজুত থাকে।
পেটের সমস্যা:
অনেকে রাস্তায় খোলা পরিবেশে বানানো আখের রস, লেবুর শরবত, বেলের শরবত, অ্যালোভেরার জুস, চিনি দেওয়া বিভিন্ন ফলের রস খেয়ে ফেলেন। এ কারণে গরমের সময় পানিবাহিত রোগ, যেমন টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, ডায়রিয়া, আমাশয়, বদহজম ইত্যাদি অনেক বেড়ে যায়। যেকোনো পেটের সমস্যায় ডাবের পানি, টক দই, আপেল, কাঁচা কলা, পেঁপে, চিয়া সিড, আদা, কিমচি, হলুদ চা, জিরাপানি, তুলসী চা, ইশবগুলের ভুসি, বার্লি, ওটস, মধু ও লাল খাবার ভালো কাজ করে। এ ছাড়া ঝিঙে, চিচিঙ্গা, করলা, ধুন্দুল, শসা, পটোল ইত্যাদি গ্রীষ্মের সবজি পেটের সমস্যায় বেশ উপকারী।
ঠান্ডা, সর্দি, কাশি:
ঋতু পরিবর্তনের কারণে বা গরমে অতিরিক্ত ঘেমে অনেকেই এ সময় ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, গলাব্যথায় আক্রান্ত হয়। এ সময় ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ টক ফল ও সবজি, যেমন কমলা, মাল্টা, আনারস, পেয়ারা, ক্যাপসিকাম বেশ ভালো কাজ দেয়। এ ছাড়া গরম স্যুপ, গ্রিন টি, তুলসী চা, আদা চা বা যেকোনো হারবাল চা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা নিরাময়ে বেশ কার্যকর। গরম পানিতে হালকা মধু, আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ ইত্যাদি মসলা দিয়ে খেলেও ভালো ফল পাবেন। ঠান্ডা লাগলে দই, কলা, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া যাবে না, এমন কোনো কথা নেই।
ইলেকট্রোলাইটের অসমতা:
গরমে ঘামের সঙ্গে দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড বেরিয়ে গিয়ে অনেক জটিলতা তৈরি করতে পারে। এ ঘাটতি পূরণে ডাবের পানি, কলা, কাঁচা আম, লিচু, স্যালাইন, লেবুর শরবত, ফলের রস ইত্যাদি বেশ সহায়ক।
কী খাবেন না:
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত মসলা, তেল, ভাজাপোড়া, রাস্তার খোলা খাবার অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া গরু–খাসির ভুঁড়ি, কলিজা, মাংস, পায়া ইত্যাদি এ সময় এড়িয়ে চলা উচিত।
ফাহমিদা হাশেম,
জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ,
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল
Thanks for the post