high-risk-pregnancy-mother-care-and-management

গর্ভপাতের লক্ষণ দেখা দিলে Leave a comment

২৫-৩০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রথম ৬ মাসের মধ্যে যোনিপথে রক্তপাত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভপাত হয়ে যায়, আর বাকি ৫০ শতাংশ পুরো গর্ভকাল অতিক্রম করে সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করতে সক্ষম হন। তবে থ্রেটেন্ড অ্যাবরশন বা গর্ভপাতের লক্ষণ দেখা দেওয়া এমন একটি ঘটনা, যেখানে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলে দুই–তৃতীয়াংশ গর্ভপাতই রোধ করা সম্ভব।

থ্রেটেন্ড অ্যাবরশন বলতে আমরা বুঝি, গর্ভাবস্থার প্রথম ২০ সপ্তাহের মধ্যে যোনিপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রক্তক্ষরণের পরিমাণ খুব অল্প হয় এবং তা উজ্জ্বল লাল রং বা লালচে বাদামি রঙের হতে পারে। ব্যথা থাকে না বললেই চলে। তবে অনেকের রক্তক্ষরণের সঙ্গে তলপেটে বা কোমরে ব্যথাও থাকতে পারে।

কাদের ঝুঁকি বেশি—এই সমস্যার প্রকৃত কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যাঁদের নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো থাকে, তাঁদের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি।

  • গর্ভাবস্থায় ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত কোনো সংক্রমণ
  • পেটে আঘাত পাওয়া
  • বেশি বয়সে মা হওয়া (৩৫ বছরের বেশি)
  • বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল বা ওষুধ সেবন
  • স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা ইত্যাদি

কী করণীয়

গর্ভকালীন অল্প রক্তপাতও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে যতটা সম্ভব বিশ্রামে থাকতে হবে এবং কোনো বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে হবে। রক্তপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। ভারী কাজ একেবারেই করা যাবে না। রক্তপাত বন্ধ করতে প্রোজেস্টেরন হরমোন অনেক সময় দেওয়া হয়, যা গর্ভাবস্থা চালিয়ে যেতে সাহায্য করে।

উপদেশ

  • নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দৈনন্দিন কাজকর্ম কম করা
  • ভারী কাজ না করা
  • স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকা
  • ৩–৪ সপ্তাহ পরপর আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা গর্ভস্থ শিশুর কী অবস্থা।

জটিলতা

গর্ভকালীন জটিলতা কেমন হবে, তা আগে থেকে বলা বেশ কঠিন। তবে থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনের ক্ষেত্রে দেখা যায় এক-তৃতীয়াংশ গর্ভপাত কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হয় না। কিন্তু বাকি দুই–তৃতীয়াংশ পূর্ণ গর্ভকাল পর্যন্ত যায়। তবে গর্ভাবস্থা চলমান থাকলেও পরে তাঁদের প্রিটার্ম লেবার (নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসবব্যথা শুরু হওয়া), অমরার অস্বাভাবিক অবস্থান (প্লাসেন্টা প্রিভিয়া), কম ওজনবিশিষ্ট শিশু জন্মদান, শিশুর জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।

গর্ভাবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিছু নিয়ম মেনে চলা এবং তার সঙ্গে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে অপ্রত্যাশিত গর্ভপাত অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।

সন্তান নেওয়ার আগে থেকে প্রি-নাটাল কেয়ারের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং তাঁর উপদেশ মেনে চলা।

সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করেØঅন্তত কয়েক মাস আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা। ধূমপান–মদ্যপান না করা, ক্যাফেইন গ্রহণ সীমিত করা। গর্ভাবস্থায় কোনো সংক্রমণ হলে দ্রুত তার সঠিক চিকিৎসা করা।

ডা. শামীমা ইয়াসমিন,

সহকারী রেজিস্ট্রার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ,

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *