breast-feeding-procedure-mother-and-baby

বুকের দুধ পান করানোর নিয়ম Leave a comment

শিশুর জন্মের পর কমপক্ষে ছয় মাস বুকের দুধ পান করাতেই হবে। এ সময় অন্য কোনো খাবার শিশুকে দেওয়া যাবে না। এবার জেনে নেওয়া যাক সদ্য মা হয়েছেন, এমন নারীদের জন্য বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোর সঠিক নিয়ম, চ্যালেঞ্জ আর সতর্কতা।

চ্যালেঞ্জ আর সতর্কতা:

সদ্য মা হয়েছেন নাসিমা (৩২)। ১০ দিনের বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ পান করান। কিন্তু দুই দিন হলো বাঁ পাশের স্তনে প্রচণ্ড ব্যথা। স্তন ফুলে শক্ত হয়ে আছে। স্তনের ত্বকের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি এবং গায়ে জ্বর জ্বর ভাব। এই অবস্থায় বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।

পদ্ম (২৮) সবেমাত্র মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ করে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। ছুটিকালে বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ পান করাতেন। কিন্তু হঠাৎ দুই পাশের স্তনে ব্যথা, ভারী ভারী লাগছে, শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট, বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে কষ্ট হচ্ছে।

ব্রেস্ট এনগর্জমেন্ট:

নাসিমা ও পদ্ম দুজনেই একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ সমস্যাকে বলে ব্রেস্ট এনগর্জমেন্ট। স্তনগ্রন্থিতে দুগ্ধনালির ভেতরে দুধ জমে গিয়ে, একই সঙ্গে স্তনে রক্ত ও লসিকা প্রবাহ বেড়ে গিয়ে এই সমস্যা হয়। এর কারণগুলোর মধ্যে বাচ্চা যে পরিমাণ দুধ পান করে, তার থেকে বেশি পরিমাণে দুধ উৎপাদিত হওয়া, বাচ্চাকে সঠিক উপায়ে দুধ পান না করানো, বাচ্চাকে দীর্ঘ সময় যাবৎ দুধ পান না করানো উল্লেখযোগ্য।

লক্ষণ:

ব্রেস্ট এনগর্জমেন্ট হলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তা ওপরের দুটি কেস স্টাডিতেই উঠে এসেছে।

  • স্তনে প্রচণ্ড ব্যথা।
  • ভারী ভারী ভাব।
  • ফোলা ও স্তন শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • স্তনের ত্বকের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া।
  • জ্বর জ্বর ভাব কিংবা জ্বর হওয়া।

করণীয়:

এই অবস্থায় করণীয় কী? প্রথমত, এই সময় প্রচণ্ড ব্যথার কারণে স্তন্যদানে ব্যাঘাত ঘটে। তাই সবার আগে ব্যথা কমাতে হবে। তারপর অতিরিক্ত জমে থাকা দুধ বের করে ফেলতে হবে। ব্যথা কমানোর জন্য প্রথমে অল্প সময়ের জন্য ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যেতে পারে। এরপর ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়া নিরাপদ। এরপর দ্বিতীয় দফায় স্তনে হালকা কুসুম গরম সেঁক ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে সাবধানতার সঙ্গে সেঁক দিতে হবে, যেন স্তনের সংবেদনশীল ত্বক পুড়ে না যায়। এ ছাড়া হালকা গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে। এতে স্তনে জমে থাকা অতিরিক্ত দুধ সহজে নির্গত হবে। ফলে মায়ের আরামবোধ হবে।

দ্বিতীয়ত:

স্তনে জমে থাকা দুধ হাত দিয়ে চিপে বা ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করে বের করে ফেলতে হবে। এই দুধ একটা পরিষ্কার পাত্রে বা বোতলে রাখা বা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কেননা, মায়ের এই দুধ বাচ্চাকে পান করানোর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। তবে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা দুধ অবশ্যই সংগ্রহ করার চার ঘণ্টার মধ্যে পান করাতে হবে।

নতুন মায়েদের স্তনের যত্ন:

বাচ্চাকে নিয়মিত ও ঘন ঘন দুধ খাওয়াতে হবে। এতে দুধ জমে যাবে না। সঠিক নিয়মে দুধ পান করাতে হবে। প্রথমে মা আরাম করে বসবেন এবং বাচ্চাকে বুকের কাছে টেনে নেবেন। বাচ্চার মুখের ভেতর স্তনের শুধু বোঁটা নয়, বরং চারপাশের কালো অংশসহ প্রবেশ করাতে হবে। এতে সহজে ও যথেষ্ট পরিমাণে দুধ নির্গত হবে ও বাচ্চার মুখের ভেতর প্রবাহিত হবে। একবার এক পাশের স্তন থেকে পান করানো শুরু করলে সম্পূর্ণভাবে পান করিয়ে শেষ করবেন। এর পরেরবার পান করানোর সময়ে অন্য পাশের স্তন থেকে একইভাবে পুরোপুরি পান করিয়ে শেষ করবেন। মাকে সঠিক মাপের আরামদায়ক ফিটিং অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে।

ব্রেস্ট এনগর্জমেন্টে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে স্তনে প্রদাহ (ম্যাসটাইটিস) হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণও হতে পারে। স্তনে ফোলা ও প্রচণ্ড ব্যথার সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা এর লক্ষণ। তখন দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

শিশুকে স্তন্যদানের মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ধন দৃঢ় হয়। স্তন্যদানের পুরো সময়টুকু, অর্থাৎ জন্মের পর প্রথম ছয় মাস এবং তার পরবর্তী সময় স্তন্যদানকে আনন্দপূর্ণ ও নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য মায়েদের সব প্রস্তুতির পাশাপাশি দুগ্ধদানকালে স্তনের যত্ন ও অসুখ সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন।

ডা. রেজিনা নোভা

সহকারী সার্জন,

দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টাঙ্গাইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *