cancer-in-stomach-management-and-treatment

খাদ্যনালির ক্যানসারের কারণ এড়িয়ে চলুন Leave a comment

আমরা কোনো খাবার খেলে সেটি প্রথমে মুখ দিয়ে গলনালি এবং পরে খাদ্যনালি হয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। গলনালির শেষ থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত যে ফাঁপা নলটি, যার মাধ্যমে খাদ্য গেলার পর পাকস্থলীতে যায়, তাকে খাদ্যনালি বলে। এই খাদ্যনালির ভেতরের ঝিল্লিতে যখন কোনো ক্ষত হয়, যা সহজে সারে না এবং ধীরে ধীরে বড় হয়ে একটা পিণ্ডের সৃষ্টি করে, তখনই রোগী অনুভব করেন যে তাঁর গিলতে সমস্যা হচ্ছে। বুকের মধ্যে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হচ্ছে। শরীরের ওজন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে।

তখনই সন্দেহ হয় যে খাদ্যনালিতে খারাপ কিছু হয়নি তো? মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রথমটি হচ্ছে খাদ্য। আর এই খাদ্যগ্রহণ যখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় কিংবা কষ্টকর হয়ে যায়, এর চেয়ে বড় দুর্ভোগ আর কিছুই হতে পারে না। এ রকম এক দুর্ভোগের নামই খাদ্যনালির ক্যানসার। ফাঁপা নলটির ভেতরের ঝিল্লিতে রোগটি শুরু হয়ে যখন নল বা টিউব বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, তখনই রোগটি ভালোভাবে প্রকাশ পায়।

খাদ্যনালির ক্যানসারের কারণ

* ধূমপান ও মদ্যপান।
* চুন ও জর্দা দিয়ে পান খাওয়া।
* রাসায়নিক দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া।
* অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া।
* ফাস্টফুড ও জাঙ্কফুড বেশি খাওয়া।
* দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।
* শাকসবজি ও ফলমূল কম খাওয়া।
* ডিডিটি দিয়ে সংরক্ষণ করা শুঁটকি খাওয়া।

খাদ্যনালির ক্যানসারের উপসর্গ

খাদ্যনালির ক্যানসারে দীর্ঘদিন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে রোগটি থেমেও থাকে না। বরং যকৃৎ, পাকস্থলী, ফুসফুস, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত্র,অগ্ন্যাশয়সহ অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত হলে যে উপসগর্গুলো দেখা দিতে পারে, সেগুলো হচ্ছে—* খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া।
* খাদ্যনালি থেকে বারবার খাবার মুখে উঠে আসা।
* খাবার খেলেই বমি হওয়া।
* ক্ষুধামান্দ্য, রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা ও অবসাদ।
* গলার স্বর ফ্যাসফ্যাসে হয়ে যাওয়া।
* বুকে জ্বালাপোড়া।
* গলাব্যথা ও গলা দিয়ে রক্ত পড়া।
* কথা বলতে কষ্ট হওয়া।

রোগনির্ণয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা

খাদ্যনালির ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে থাকেন। সেগুলো হলো—
* এন্ডোস্কপি
* বেরিয়াম মিল এক্স-রে
* সিটি স্ক্যান
* আল্ট্রাসনোগ্রাফিক এন্ডোস্কপি
* পেট সিটি স্ক্যান

এ ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে টিউমারটি থেকে প্রয়োজনীয় মাংস এনে তা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করে রোগটি নির্ণয় এবং এরই মধ্যে কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, সেটি নির্ণয় করা হয়।

খাদ্যনালির ক্যানসারের চিকিৎসা

রোগনির্ণয়ের পরই আসে চিকিৎসার পালা। চিকিৎসা অনেকটাই নির্ভর করে ক্যানসার কোন ধাপে আছে, তার ওপর। রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে এবং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে এবং রোগীর অবস্থার অবনতি না হলে যথাযথ চিকিৎসায় রোগমুক্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি। রোগটি শেষ পর্যায়ে ধরা পড়লে শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এতে নিরাময় সম্ভব না হলেও রোগীর কষ্ট অনেকাংশে প্রশমন করা সম্ভব।

খাদ্যনালির ক্যানসারের উল্লেখযোগ্য কিছু চিকিৎসাপদ্ধতি হচ্ছে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইত্যাদি। এ রোগে কখনো কখনো একাধিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে সাফল্যের হার অনেক বেশি।

 

অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, সাবেক পরিচালক,

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *