শীত শেষ হয়ে বসন্ত এসে গেছে। এ সময় তাপমাত্রা, বাতাসে আদ্রর্তা ইত্যাদিতে পরিবর্তন আসে। বাতাস শুষ্ক থাকে, ঝরা পাতা বাড়ে। ঋতুবৈচিত্র্যের এসব দিনে চোখের রোগবালাইয়ের আবির্ভাব ঘটে।
এ সময় ফুলের রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাতে চোখের অ্যালার্জিসহ চোখ ওঠা রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একে বলে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস। এতে চোখ লাল হয়ে যায়, পানি পড়ে, চুলকানি হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এঁদের বলা হয় অ্যাটোপিক রোগী।
আসলে চোখ ওঠা একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। কনজাংটিভা বা চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা বলা হয়।
কেউ চোখ ওঠা রোগীর চোখের দিকে তাকালে কারও চোখ ওঠে না, এটি কুসংস্কার। তবে এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে রোগ। এতে রোগীর হাতের বা ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সংস্পর্শে আশপাশের অনেককেই আক্রান্ত করতে পারে।
চোখ ওঠা রোগ হলে প্রথমে চোখের মণির চারপাশে হালকা লাল রং দেখা দেয়। চোখের পাতা ফুলে যায় ও জ্বালাপোড়া করে। চোখের ভেতর অস্বস্তি ও ব্যথা শুরু হয়। রোদ বা আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। চোখ থেকে অতিমাত্রায় পানি পড়ে। চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হতে পারে ও হলুদ রঙের পুঁজের সৃষ্টি হয়। ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা দুটি একত্রে লেগে থাকে।
করণীয়
চোখ উঠলে প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়। পরিষ্কার কাপড় অথবা টিস্যু দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। যতটা সম্ভব ওই কাপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। অন্য চোখেও যাতে না ছড়ায়, সে জন্য যতটা সম্ভব ভালো চোখটাতে হাত না দেওয়া ভালো। তবে সাধারণত একই সঙ্গে অথবা পর্যায়ক্রমে দুই চোখই আক্রান্ত হয়। রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন বালিশের কভার, তোয়ালে ইত্যাদি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এ ধরনের চোখ ওঠায় অ্যান্টিভাইরাল সাধারণত কাজ করে না। ভাইরাস আক্রমণের সাত–আট দিনের মাথায় আপনাআপনি সেরে যায়। বাইরে বের হলে অবশ্যই রোদচশমা পরতে হবে। যে পাশের চোখ উঠবে, সে পাশেই কাত হয়ে শুতে হবে। চোখে বারবার পরিষ্কার পানি দিয়ে পরিষ্কার করা বা চোখে পানির ঝাপটা দেওয়ার দরকার নেই।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ কে আজাদ,
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন;
বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।