heart-attack-vs-cardiac-arrest

হার্ট এ্যাটাক বনাম কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট Leave a comment

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হার্টজনিত রোগে। মোট মৃত্যুর ৩২% ঘটে হৃদজনিত আঘাতে। বছরে ১৭ মিলিয়ন মারা যায় কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যায় । এই মৃত্যুর প্রতি পাঁচজনের চার জন মারা যায় হার্ট এ্যাটাক নয়ত স্ট্রোকে । প্রায় ৮৫% ।

হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট এই তিনটি লোকে বেশি শুনে থাকে। এদের মধ্যে স্ট্রোক মস্তিষ্কে ঘটে, ভুল করে লোকে হার্টে ভাবে। হার্ট এ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট, দুটোই হার্টে ঘটে। আর তাতেই গোলমাল হয়ে যায়। লোকে ভুল করে দুটোকেই একই ভেবে বসে।লোকে প্রায় শুনে থাকে হার্ট এ্যাটাক শব্দটি। পরিচিত কারো হার্ট এ্যাট্াক হওয়ার কথা। লোকে কারও মৃত্যুর কোন কারণ বলতে না পারলে মাথার চুলকে বলে- হার্ট এ্যাট্াকে মারা গেছে।আবার কখনও কখনও শুনে কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হয়েছে কারও। দুটোর মাঝে গোলমাল বাঁধিয়ে ফেলে। কারণ আর কিছু নয়- দুটোকে একই মনে করে বসে।

সম্প্রতি ঊনত্রিশ বছর বয়সী ডেনিশ ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের ফুটবল মাঠে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা বিশ্ব মিডিয়ায় এসেছে। শেষে জানা গেল – এরিকসনের কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হয়েছে, হার্ট এ্যাট্াক নয়।কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট এবং হার্ট এ্যাটাক একই নয়। দুটোই হার্টে ঘটে, কিন্তু দুটো ভিন্নভাবে ঘটে । লোকে দুটোকে কখনও একই ভেবে বসে, কখনও একটিকে আরেকটির প্রতিশব্দ ভাবে।

কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হলো হঠাৎ হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে গিয়ে শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া কমে যাওয়া । হার্ট তার পাম্প ক্ষমতা হারালে রক্তকে সারা দেহে পৌঁছে দিতে পারবে না। এতে প্রথমে ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। রক্ত বাতাসের অক্সিজেনকে ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং কার্বনডাই অক্সাইডকে ফুসফুস থেকে বের করে আনে। রক্তের ঘাটতি বাতাসের ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সঙ্গে হার্টের পাম্প ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কেও রক্ত সরবরাহ কমে যায়। রক্তের অভাবে মস্তিষ্ক তার কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে এবং দ্রæত অজ্ঞান হয়ে যায়।

হার্ট এ্যাটাক হলো হার্টের নিজের কাজের জন্য মাসলগুলোতে যে রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন হয়, তা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া। তখন হার্ট আর ঠিকমতো পাম্প করতে পারে না। একে একে দ্রæত শরীরের অন্য অংশগুলোতে রক্ত আর যেতে পারে না। হার্ট এ্যাটাক হলো হার্টের রক্ত প্রবাহ বন্ধ বা কমে যাওয়া। কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হলো হার্টের পাম্প ক্ষমতা বন্ধ বা কমে যাওয়া। হার্ট এ্যাটাক হার্ট নিজের রক্ত সরবরাহ হারায়, কার্ডিয়াক এ্যারেস্টে সারা দেহ রক্ত সরবরাহ হারায়।

হার্ট এ্যাটাক হলো সার্কুলেশন প্রবেøম, কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হলো ইলেক্ট্রিক্যাল প্রবেøম। হার্ট এ্যাটাক সার্কুলেশনে ঘাটতি দেখা দেয় হার্টে, কার্ডিয়াক এরেস্টে হার্টের বিট করার জন্য যে ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসের দরকার হয় তাতে ঘাটতি দেখা দেয়। কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হঠাৎ হয় কোন লক্ষণ প্রকাশ না করেই। কিন্তু হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সপ্তাহ মাস বছর ধরে ধীরে ধীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ করেই হয়।

হার্ট এ্যাটাক হয় হার্টের কোন আর্টারি বা ধমনীর কোন একটি কোন কারণে বøক হয়ে গেলে সেটি হার্টের যে যে অংশে রক্ত সরবরাহ করে, সে অংশে রক্ত আর যেতে পারে না। রক্তের অভাবে হার্টের সেই অংশের কোষগুলো প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। হার্টের কোন ধমনীতে এমন বøক অনেকক্ষণ থাকলে এক সময় সেই কোষগুলো মরে যায়। আর তাতে হার্ট তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

কার্ডিয়াক এ্যারেস্টে হার্টের নিজের রক্ত চলাচলে কোন সমস্যা তৈরি হয় না। হার্ট নিজে পাম্প করতে এক ধরনের ইলেক্ট্রিক্যাল ইম্পাল্স দিয়ে করে। কোন কারণে এই স্পন্দন ক্ষমতা কমে গেলে বা কোন ব্যাঘাত ঘটলে হার্ট তখন স্বাভাবিকভাবে লাভ ডাব বিট করতে পারে না। আর হার্ট ঠিকমতো স্বাভাবিক পাম্প না করতে পারলে শরীরের প্রধান প্রধান অংশে দ্রæত রক্তের ঘাটতি দেখা দেয়। রক্তের ঘাটতি মানে অক্সিজেনের ঘাটতি।

হার্ট এ্যাটাক হার্টের স্পন্দন ক্ষমতার কোন ব্যাঘাত ঘটে না, হার্টের পেশিগুলোতে রক্ত সরবরাহের অভাবে হার্ট ঠিক মতো কাজ করে না। আবার কার্ডিয়াক এ্যারেস্টে হার্টের নিজের রক্ত সরবরাহে কোন ব্যাঘাত ঘটে না, কিন্তু ইলেকট্রিক স্পন্দনের ব্যাঘাত ঘটায় হার্ট ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। আর তাতে সারা শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা দেয় ।

দুটোর মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। কারও হার্ট এ্যাটাক হলে তার পরেই কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হতে পারে। কারণ হার্ট এ্যাটাক হলে রক্তনালী বøক হয়ে হার্টের আংশিক অংশকে অকেজো করে দেয়। এতে হার্টের ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যাল ব্যাহত হয়ে কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হতে পারে। তাই হার্ট এ্যাটাক হলে কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হওয়ার সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রাখতে হয়।

কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হওয়ার অনেকগুলো কারণের একটি হার্ট এ্যাটাক। আবার কার্ডিও মায়োপ্যাথি বা হার্টের সাইজ বড় হয়ে গেলে, অথবা মায়োকার্ডাইটিস বা হার্টের পেশির ইনফ্ল্যামেশন হলে কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হতে পারে।

হার্ট এট্যাকের মূল কারণ হার্টের করোনারি আর্টারি কোন কারণে বøক বা সরু হয়ে গেলে। কার্ডিয়াক এ্যারেস্টের মূল কারণ হার্টের ইলেক্টিকেল সিগন্যাল ঠিকমতো কাজ না করা।

হার্ট এ্যাটাকের লক্ষণ হলো :

বুকে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, বমি হওয়া, প্রচণ্ড দুর্বল লাগা। কার্ডিয়াক এ্যারেস্টের লক্ষণ : পালস না থাকা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হঠাৎ সম্পূর্ণ ঢলে পড়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট।

হার্ট এ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট, দুটোই ইমারজেন্সি পরিস্থিতি। দ্রæত হাসপাতালে নেয়া প্রথম জরুরী কাজ। হার্ট এ্যাটাক হলে এসপিরিন অথবা নাইট্রোগ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ানো প্রথম কাজ। তবে এটি নিজে নিজে করতে যাবেন না। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ অথবা হাসপাতাল ক্লিনিকে এটি করবেন। কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট যেখানেই হোক, প্রথম কাজ দ্রæত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, হাসপাতাল নিতে দেরি হলে তাৎক্ষণিক ঈচজ করা, তার চেয়ে উন্নত ব্যবস্থা থাকলে অঊউ বা অঁঃড়সধঃবফ ঊীঃবৎহধষ উবভরনৎরষষধঃড়ৎ ব্যবহার করা।

মোটা হয়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, মদপান, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, ব্যায়ামের অভাব, এইসবগুলোই হার্ট এ্যাটাক থেকে কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট কিংবা কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী।

নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান, ধূমপান পরিহার করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে চেষ্টা করুন।

ডাঃ অপূর্ব চৌধুরী

কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান লেখক

লন্ডন, ইংল্যান্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *