গর্ভধারণের প্রস্তুতির কাউন্সেলিং

গর্ভধারণের প্রস্তুতি বা প্রিকনসেপশনাল কাউন্সেলিং কথাটার সঙ্গে খুব একটা পরিচিত না হলেও এর গুরুত্ব অনেক। গর্ভধারণের আগেই কোনো দম্পতি যখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং আসন্ন গর্ভাবস্থায় ও প্রসবকালে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং কীভাবে তা সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করেন, তাকে প্রিকনসেপশনাল কাউন্সেলিং বলে। এর মূল লক্ষ্য হলো একজন হবু মায়ের সন্তান ধারণের আগে সম্পূর্ণ সুস্থতা নিশ্চিত করা এবং সুস্থ সন্তানের জন্মদান, গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব–পরবর্তী জটিলতা কমানো।

কারণ, মেয়েদের অনেকের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত সমস্যা, রক্তশূন্যতা, জিনগত বিভিন্ন সমস্যা থাকে। কিন্তু সে বিষয়ে তিনি হয়তো জানেন না। এ অবস্থায় সন্তান ধারণ করলে গর্ভস্থ শিশু ও মায়ের নানা জটিলতা হতে পারে। গর্ভধারণের অন্তত তিন মাস আগে প্রিকনসেপশনাল কাউন্সেলিং শুরু করা যেতে পারে।

গর্ভধারণের আগে যা করতে হবে

  • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডের মতো রোগ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে গর্ভপাত হতে পারে, গর্ভাবস্থায় শিশু মারা যেতে পারে, ওজন কম বা বেশি হতে পারে, শিশুর বুদ্ধি বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, জন্মের সময় ও পরবর্তীকালে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি মায়ের নিজেরও নানা জটিলতা হতে পারে। এসব ঝুঁকি শনাক্তের পর যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের পরই গর্ভধারণ করা।
  • রুবেলা ও হেপাটাইটিসের টিকা নেওয়া না থাকলে তা নিতে হবে।
  • গর্ভধারণের এক মাস আগে থেকে এবং গর্ভধারণের তিন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন ৪ মিলিগ্রাম করে ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে। এটি শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
  • মায়ের অতিরিক্ত ওজন, কম ওজন, রক্তশূন্যতা—এগুলো ঠিক করে এরপর গর্ভধারণ করা উচিত।
  • কেউ যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, খিঁচুনি, ঘুম বা মানসিক সমস্যা, থাইরয়েড ইত্যাদি রোগের ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাহলে তা অব্যাহত রাখবেন কি না, তা জেনে নিতে হবে।
  • গর্ভধারণের যে ভয় বা উৎকণ্ঠা থাকে, তা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে দূর করা।
  • পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা করা এবং ধূমপান বর্জন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা। জিনগত রোগের স্ক্রিনিং টেস্ট করা এবং এর ঝুঁকি নিয়ে অবহিত করা। প্রসবের সময়, প্রসবের পদ্ধতি, কী কী পদক্ষেপ প্রয়োজন, সে বিষয়ে অবহিত করা। যাঁদের বারবার গর্ভপাত হয় বা খারাপ ইতিহাস আছে, তাঁদের সঠিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে কারণ খুঁজে না বের করে আবার গর্ভধারণ করা অনুচিত।

 

ডা. শামীমা ইয়াসমিন

সহকারী রেজিস্ট্রার

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা