laser-spine-surgery-and-treatment-in-bangladesh

ডিস্কের লেজার অপারেশন সহজতর হচ্ছে দেশেই Leave a comment

মানুষের মেরুদণ্ডের শক্ত হাড় ছাড়াও আছে দুই হাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে নরম হাড় (ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক), যা গাড়ির স্প্রিং বা শক অবজারবারের মতো কাজ করে। সাধারণত ভারি জিনিস তোলা, আঘাত, শরীরে বিশেষ অবস্থায় ঝুঁকি খাওয়া সহ নানা কারণে ডিস্কের স্থানচ্যুতি (প্রোল্যাপ্স) হয়ে সংলগ্ন মেরুরজ্জু (স্পাইনাল কর্ড) অথবা স্নায়ুমূল (নার্ভরুট) কিংবা উভয়ের ওপরে চাপ পড়তে পারে। এতে কোমরের (লাম্বার) ডিস্ক প্রোল্যাপ্স রোগী তীব্র ব্যথা অনুভব করে। ফলে রোগী বসতে বা দাঁড়াতে পারে না।

কোমরে উৎপন্ন ব্যথা স্নায়ুগুলো (নার্ভ) কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কোমর ব্যথার পাশাপাশি একপাশ বা উভয় পাশের রানে, হাঁটুতে, হাঁটুর নিচ বা পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত যে কোন স্থানে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এ ছাড়া উল্লিখিত স্থানগুলোয় ঝিনঝিন, শিনশিন, পায়ের বোধশক্তি কমে যায়, পর্য়ায়ক্রমে পা দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে রোগী হাঁটতে বা দাঁড়াতে, এমনকি বসতেও পারে না।

আবার ঘাড়ে (সারভাইক্যাল) উৎপন্ন ব্যথা ঘাড় থেকে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। কাজেই ঘাড়ের ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘাড় ব্যথার পাশাপাশি ডান বা বাম হাত বা উভয় হাতে ব্যথা অনুভব হতে পারে। লাম্বার ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের মতো এখানেও হাত ঝিনঝিন বা শিনশিন করে, হাতে বোধশক্তি কমে যায়। একপর্যায়ে হাত দুর্বল হয়ে পড়ে।

ভার্টেব্রাল ডিস্ক :

গঠনগতভাবে নিউক্লিয়াস প্যালপোসাস (কেন্দ্রমধ্যস্থিত জেলির মতো পদার্থ) ও এ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস (চারপাশস্থ শক্ত ফাইবার বা আঁশ ও ছোট ছোট রক্তনালী) দিয়ে তৈরি। দাঁড়ানো অবস্থায় বা ভারি কিছু বহনকালে কেন্দ্রস্থিত জেলির ওপর চাপ পড়ে। কিন্তু শক্ত এ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস সেই চাপ নিয়ন্ত্রণ করে ডিস্কের গঠন ঠিক রাখে। বেশি ওজন বহন বা অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়ায় নিউক্লিয়াস প্যালপোসাসের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বা অসম চাপ পড়লে অতিরিক্ত চাপ এ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে নিউক্লিয়াস প্যালপোসাস, এ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস কখনও কখনও ছিড়ে কোন একদিকে বের হয়ে আসে। ফলে মেরুরজ্জ (স্পাইনাল কর্ড) অথবা স্নায়ুমূল (নার্ভরুট) অথবা উভয়ের ওপর চাপ পড়ে।

চিকিৎসা:

১৯৩৪ সাল থেকে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে পিঠের চামড়া, মাংস ও হাড়ের মাঝখানে দিয়ে কেটে বেরিয়ে আসা বা প্রোল্যাপ্সড নিউক্লিয়াস প্যালপোসাসের অংশটুকু তুলে এনে স্নায়ুরজ্জুর চাপ প্রশমিত করা হয়। গবেষণা বা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, পারকিউটেনিয়াস লেজার ডিস্ক ডিকস্প্রেশনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাত্রার ও নির্দিষ্ট ধরনের লেজার রশ্মি প্রয়োগ করে সহজেই নিউক্লিয়াস প্যালপোসাসসের অংশ বিশেষ বাষ্পয়িত করার মাধ্যমে এর অতিরিক্ত চাপ কমানো সম্ভব। স্থানচ্যুত (প্রোল্যাপ্সড) ডিস্কও আগের অবস্থায় ফিরে আসে এবং স্পাইনাল কর্ড ও নাভব্রুটের ওপর থেকে চাপ কমে গিয়ে রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারেন।

লেজার অপারেশন:

লেজারের অপটো-থারমো-মেকানিক্যাল স্টিমুলেশনের মাধ্যমে ছিড়ে যাওয়া এ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস পুরো ক্ষমতাটা রিপেয়ার বা আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে হাড়, মাংস ও চামড়া কাঁটার যেমন প্রয়োজন হয় না, তেমনি অজ্ঞান করারও প্রয়োজন পড়ে না। ডায়াবেটিক বা হৃদরোগীর ক্ষেত্রেও লেজার সার্জারি তেমন সমস্যার কারণ হয় না। হাড় মাংস না কাটায় লেজার প্রয়োগের স্থানও দুর্বল হয় না এবং কোন ক্ষতচিহ্ন (স্কার) থাকে না। যে কোন কারণে ভবিষ্যতে এ অংশে স্কারের টানের কোন ব্যথাও অনুভূত হয় না।

উন্নত বিশ্বে ডিস্ক :

প্রোল্যাপ্সের বেশিরভাগ রোগীর এখন আর কেটে অপারেশন করা হয় না। সারভাইক্যাল বা লাম্বার ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের বেশিরভাগ রোগী পারকিউটেনিয়াস লেজার ডিস্ক ডিস্প্রেশনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে থাকে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এ চিকিৎসায় যে ধরনের বা যে মাত্রার লেজার রশ্মি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আমেরিকার ফেডারেল ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন ইতোমধ্যে এটি নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভাল থাকা যায়।

ডাঃ মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী

বিএলসিএস ইনস্টিটিউট এ্যান্ড হসপিটাল,

আফতাবনগর, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *