colorectal-cancer-awareness-management-and-treatment

মলদ্বারের ক্যানসারের চিকিৎসা Leave a comment

কোলোরেক্টাল ক্যানসার

কোলোরেক্টাল ক্যানসারের এক–তৃতীয়াংশ হচ্ছে রেক্টাল ক্যানসার বা মলদ্বারের ক্যানসার। গত তিন দশকে রেক্টাল ক্যানসারের রেডিওথেরাপির ভূমিকায় নানাবিধ পরিবর্তন এসেছে। আশির দশকে রেক্টাল ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর আবার ওই একই স্থানে রোগ ফিরে আসা ঠেকাতে রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে এই রেডিওথেরাপির সঙ্গে কেমোথেরাপি যোগ করে আরও ভালো ফল লক্ষ্য করা যায়।

অস্ত্রোপচার

আরও গবেষণা করে দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারের আগে যদি কিছুদিনের (পাঁচ দিন) বা দীর্ঘ মেয়াদে (পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ) রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়, তাহলে ক্যানসারটি আরও ভালোভাবে অস্ত্রোপচারের যোগ্য হয় এবং রোগটি ফিরে আসার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। অস্ত্রোপচারের আগে রেডিওথেরাপির সঙ্গে কেমোথেরাপি যোগ করে দিলে তা আরও বেশি কার্যকরী হয়।

রোগ নির্ণয়

নতুন নতুন রোগ নির্ণয় সুবিধা ও পরীক্ষা–নিরীক্ষা আবিষ্কৃত হওয়ার কারণে এখন অনেক সূক্ষ্মভাবে রেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসা করা সম্ভব। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাটা হলো, উচ্চ রেজুলেশনসংবলিত এমআরআই। এর মাধ্যমে রেক্টাল ক্যানসারের আকার, এর বিস্তৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। এতে ক্যানসারের পর্যায় নির্ধারণ বা স্টেজিং অনেক সহজ হয়ে যায়। আর সঠিক পর্যায় নির্ধারণ করতে পারলে সঠিক ও আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক রেক্টাল ক্যানসারের রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

বাংলাদেশে কোলোরেক্টাল ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থা

অন্যান্য উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে গত দুই দশকে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশেই এখন হিস্টোপ্যাথলজির পাশাপাশি ইমিউনো হিস্টো কেমিস্ট্রি করে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু মলিকুলার পরীক্ষা যেসব আধুনিক ক্যানসার চিকিৎসার জন্য জরুরি, তার অনেকগুলোই এখন বাংলাদেশেই করা হয়ে থাকে। রেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসা করতে যেসব কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি বা ইমিউনোথেরাপির ওষুধ প্রয়োজন, তার প্রায় শতভাগ এখন বাংলাদেশেই পাওয়া যায় এবং ওষুধগুলো সঠিক তাপমাত্রা ও ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করেই রোগীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ফলে ওষুধের গুণগত মানের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

বাংলাদেশ ক্যানসার চিকিৎসার আরেকটি মাইলফলক হলো রেডিওথেরাপির চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন। রেক্টাল ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। থ্রি–ডি সিআরটি, আইএমআরটির মতো উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এখন বাংলাদেশেই নিখুঁতভাবে রেক্টাল ক্যানসারের রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এর ফলে ক্যানসারে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ ডোজের নিশ্চিতের পাশাপাশি এর আশপাশের যেসব সাধারণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে, সেগুলো যথাসম্ভব রক্ষা করা যায়। ফলশ্রুতিতে ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা যেমন কমে যায়, তেমনি চিকিৎসাসংক্রান্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক কম হয়।

রেডিওথেরাপির পুরো বিষয়টি একটি টিম ওয়ার্ক। রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, মেডিকেল ফিজিসিস্ট ও রেডিয়েশন টেকনোলজিস্টের সমন্বয়ে গঠিত এই টিমের দক্ষতার ওপরই রেডিওথেরাপির পরবর্তী ফলাফল অনেকাংশে নির্ভরশীল। আশার কথা যে দেশে এ বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে, যার ফলে অনেক কম খরচে বিদেশে না গিয়ে অনেক ক্যানসার রোগী চিকিৎসা পাবেন।

 

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

কনসালট্যান্ট, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ,

এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *