কিডনি রোগীর জন্য সতর্কতার সঙ্গে পথ্য নির্ধারণ করতে হয়। সঠিক পথ্য মেনে চললে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে
রাখা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে একজন ক্লিনিক্যাল ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ক্যালরি
কিডনি রোগীদের সাধারণত ক্যালরির পরিমাণ অন্য রোগীদের তুলনায় বাড়ানো হয়। রোগীর মাংসপেশিকে বজায় রাখতে এর যথেষ্ট দরকার। প্রতি কেজি ওজনের জন্য রোগী ভেদে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোক্যালরি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
শর্করা
কিডনি রোগীর ক্যালরির বেশির ভাগই শর্করা থেকে নিতে হয়। তবে ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে শর্করার মাত্রা দেখতে হবে। ভাত, ময়দা, রুটি, চিড়া, সুজি, চালের গুঁড়া, চালের রুটি, সাগু, সেমাই ইত্যাদি কিডনি রোগীর জন্য উত্তম কার্বোহাইড্রেট।
প্রোটিন
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীকে প্রতি কেজি ওজনের জন্য শূন্য দশমিক পাঁচ থেকে শূন্য দশমিক আট গ্রাম প্রোটিন বরাদ্দ করা যেতে পারে। যদিও এটি নির্ভর করবে রোগীর অবস্থা ও বিভিন্ন পরীক্ষার ওপর। সাধারণত ডাল, বাদাম, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি ইত্যাদি বর্জনীয়। প্রোটিনের চাহিদা ডিমের সাদা অংশ, মাছ, মুরগির মাংস ও দুধ বা দই ইত্যাদি থেকে বরাদ্দ করা হয়। গরু, খাসির মাংস, কলিজা, মগজ ইত্যাদি এড়ানো উচিত।
চর্বি
সম্পৃক্ত চর্বি, ভাজাপোড়া খাবার, ফাস্ট ফুড, ডিমের কুসুম এড়িয়ে যেতে হবে। রান্নায় উদ্ভিজ্জ তেল, সূর্যমুখী, কর্ন অয়েল, ক্যানোলা অয়েল ইত্যাদির ব্যবহার ভালো। প্রতিদিনের রান্নায় চার চা–চামচ (২০ এমএল) তেল ব্যবহার করলে ভালো।
লবণ
সাধারণত দুই থেকে পাঁচ গ্রাম লবণ যথেষ্ট। আলাদা লবণ ও অতিরিক্ত সোডিয়ামযুক্ত খাবার বর্জনীয়; যেমন চিপস, পাপর, চানাচুর, আচার ইত্যাদি।
তরল/পানি
চা, দুধ, পানি—সব মিলিয়ে দৈনিক তরলের হিসাব করা হয়। কতটুকু তরল বরাদ্দ করা হবে, তা নির্ভর করবে রোগীর শরীরে পানি জমা, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, সোডিয়ামের মাত্রা, ইজিএফআর—এসবের ওপর। এক থেকে দেড় লিটার, কখনো কখনো দুই লিটার পর্যন্ত তরল বরাদ্দ হয়।
খেতে পারবেন
চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, করলা, বিচি ছাড়া শসা, ঝিঙে, পেঁপে, শজনে, ডাঁটাশাক, লালশাক, কচুশাক, হেলেঞ্চাশাক ইত্যাদি। কম পটাশিয়ামযুক্ত ফল রোগী ভেদে সীমিত আকারে; যেমন আপেল, পেয়ারা, পাকা পেঁপে, নাশপাতি ইত্যাদি খাওয়া যাবে। একেবারে ফল না খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
খাবেন না
ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, কচু, মুলা, পুঁইশাক, ঢ্যাঁড়স, গাজর, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি, মুলাশাক ইত্যাদি। ডাব, কলা, আঙুর খাবেন না, এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কাঁচা সবজির সালাদ, সবজি স্যুপ ইত্যাদি এড়ানো ভালো।
ইসরাত জাহান
পুষ্টিবিদ, সাজেদা ফাউন্ডেশন