শরীরে কোথাও কেটে-ছিঁড়ে গেলে রক্তপাত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য আমাদের শরীরে কিছু উপাদান বা ফ্যাক্টর থাকে। কারও কারও শরীরে বংশগতভাবে এসব উপাদান বা ফ্যাক্টরের অভাব থাকতে পারে। তাদের রক্তপাত শুরু হলে আর থামতে চায় না। এই সমস্যার অন্যতম কারণ হলো হিমোফিলিয়া।
হিমোফিলিয়া তিন রকমের: হিমোফিলিয়া-এ (ফ্যাক্টর ৮–এর অভাবজনিত), হিমোফিলিয়া-বি (ফ্যাক্টর ৯–এর অভাবজনিত), হিমোফিলিয়া-সি (ফ্যাক্টর ১১–এর অভাবজনিত)।
হিমোফিলিয়া-এ ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, হিমোফিলিয়া-বি থাকে ১০-১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। প্রতি ৫ হাজারে ১টি শিশু হিমোফিলিয়া-এ এবং প্রতি ২৫ হাজারে ১টি শিশু হিমোফিলিয়া-বিতে ভোগে।
এই রোগ শুধু ছেলেদের মধ্যে দেখা যায়, মেয়েশিশুতে হয় না বললেই চলে। শিশুর নাড়ি কাটার সময় বা খতনা কিংবা দাঁত ওঠানোর সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার ঘটনা ঘটে। একটু বড় হয়ে শিশুর খেলাধুলার সময় হাঁটু ও অন্যান্য বড় অস্থিসন্ধির ভেতর রক্তপাত হয়ে তা ফুলে যায় ও ব্যথা করে। মাঝেমধ্যে ত্বকে রক্তপাতের লালচে চিহ্ন দেখা যায়। কখনো মাড়ি থেকেও রক্ত ঝরে।
সাধারণত শিশু যখন হাঁটতে শেখে, খেলাধুলা করে, তখন থেকেই রক্তপাতজনিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে থাকে। একেবারে ছোট শিশুর প্রথম দিকে না–ও বোঝা যেতে পারে। শিশুর মাংসপেশিতে রক্তপাত হয়ে তাতে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে যায়। কখনোবা চোখের অভ্যন্তরে রেটিনাতেও রক্তপাতের চিহ্ন দেখা যায়।
কোনো শিশুর রক্তপাত অস্বাভাবিক মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা, যেমন রক্তের কমপ্লিট কাউন্ট, পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্ম, হিমোগ্লোবিন, ব্লিডিং টাইম, ক্লটিং টাইম, প্রথম্বিন টাইম, এপিটিটি ইত্যাদি করা হয়। এ ছাড়া যে সুনির্দিষ্ট ফ্যাক্টরের অভাবে হিমোফিলিয়া হয়, সেটিও পরিমাপ করা যায়।
ব্যবস্থাপনা
যে অংশ থেকে রক্তপাত হয়, সেখানে একনাগাড়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে চেপে রাখা ও সে অস্থিসন্ধি নাড়াচড়া না করা।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা।
মনে রাখতে হবে, হিমোফিলিয়া ভালো হয় না। তবে সারা জীবন চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। কাজেই শিশুর এ ধরনের সমস্যায় অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী,
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল