blood-deficiency-or-anemia-and-management

রক্তশূন্যতায় সচেতন হই Leave a comment

রক্তশূন্যতা কোন রোগ নয় বরং অসংখ্য রোগের লক্ষণ। পৃথিবীর শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত। বিশ্ব জুড়ে ৬০ কোটি মানুষ আয়রন ঘাটতি জনিত রক্তশূন্যতায় ভুগছে। সুতরাং বলা যায় এটি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা।

রক্তশূন্যতা আসলে কি?

আমরা রক্তশূন্যতা বলতে  বুঝে থাকি রক্তের হিমোগ্লোবিন নামক এক রঞ্জক পদার্থের স্বল্পতা। বয়স ও লিঙ্গ ভেদে এই হিমোগ্লোবিন যখন কাক্সিক্ষত মাত্রার নিচে অবস্থান করে তখন আমরা বলে থাকি এ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা।

হিমোগ্লোবিন শরীরের গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে। এটি কোষে কোষে পৌঁছে দেয় সঞ্জিবনী অক্সিজেন। সুতরাং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে কোষে কোষে সরবরাহ হতে পারে না প্রাণদায়ী অক্সিজেন ফলে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল, ক্লান্ত।

লক্ষণসমূহ :

হিমোগ্লোবিন কমতে থাকলে ক্লান্তি দানা বাঁধে শরীরে। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। স্বল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠে শরীর। হৃৎপি-ের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এমন কি তীব্র রক্তশূন্যতা হার্ট ফেইলুর পর্যন্ত করতে পারে। তখন পায়ে পানি জমে যায়। শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট লাগে। রক্তশূন্যতার কারণে ঠোঁটের কোনে ক্ষত হয়। জিহ্বায় ঘা হয়। জিহ্বার উপরে থাকা প্যাপিলায় ক্ষয় হয়ে এটি হয়ে পড়ে মাংসের মতো লালচে।

চুলের ঝলমলে উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। চুল ফেটে যায়, নখ ফেটে যায়। এর ফলে দেখা দিতে পারে স্নায়ুবিক দুর্বলতা। প্রান্তীয় এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু আক্রান্ত হতে পারেÑ বিশেষত ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-১২ ঘাটতি জনিত রক্তশূন্যতায়।দীর্ঘ স্থায়ী রক্তশূন্যতায় খাদ্য নালীর উপরের দিক চেপে যায় ফলে ঢোক গিলতে কষ্ট হয়। মহিলাদের মাসিক হয়ে পড়ে অনিয়মিত। মাটি, কয়লার ইত্যাদির মতো অখাদ্য-কুখাদ্য গ্রহণের তীব্র আকাক্সক্ষা তৈরি হয় কোন কোন রোগীর। লোহিত কণিকা ভেঙ্গে রক্তশূন্যতা হলে জন্ডিস দেখা দেয়। সুতরাং রক্তশূন্যতার লক্ষণ কারণ ভেদে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

কেন রক্ত শূন্যতা?

হতে পারে আয়রনের অভাবে। এ ছাড়া লোহিত রক্তকণিকা ভেঙ্গে গেলেও এমনটি হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন কিডনি ফেইলুর, লিভার ফেইলুর, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, যক্ষ্মাসহ নানাবিধ রোগে হতে পারে রক্তশূন্যতা। হিমোগ্লোবিনের নিজস্ব রোগ যেমন থ্যালাসেমিয়াসহ আরও অসংখ্য রোগে সুষ্টি হতে পারে রক্তশূন্যতা। তবে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে রয়েছে অপুষ্টি, পেপটিক আলসার, বেদনা-নাশক বড়ি সেবনের ফলে পাকস্থলীর ক্ষত, কৃমির সংক্রমণ, পাইলস কিংবা রক্তস্রাবের সময়ের রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। ঘন ঘন গর্ভধারণ আর স্তন্যদান এর পেছনে আরেকটি বড় কারণ।

চিকিৎসা করণীয় :

রক্ত শূন্যতায় আক্রান্ত হলে প্রথমেই পরখ করে নিতে হবে এর তীব্রতা। খুঁজে দেখতে হবে এর নেপথ্যের কারণ। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেহেতু আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় সে জন্য খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে লৌহ সমৃদ্ধ খাবার। এ ছাড়া ভিটামিন বি-১২ এবং ফলিক এসিডের ঘাটতির ফলেও হতে পারে রক্তশূন্যতা।

লাল মাংস, গিলা-কলিজা, ছোট মাছ, লাল-শাক, কচু শাকসহ সবজি-আনাজ আর ফল-মূলের জোগান বাড়াতে হবে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায়। ক্ষেত্র বিশেষে আয়রন ট্যাবলেট, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি-১২ খেতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে কোন কোন রক্তশূন্যতায় আয়রন গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেটাও জানতে হবে। দ্বারস্থ হতে হবে চিকিৎসকের।

লে. কর্নেল ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমদ

(সহযোগী অধ্যাপক) ক্লাসিফায়েড মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট

সিএমএইচ ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *