শিশুর বারবার টনসিলের প্রদাহ

টনসিল একধরনের গ্রন্থি। মুখ হাঁ করলে গলার ভেতরে ডান ও বাঁ দিকে ‘ছোট্ট বলের মতো টিস্যু’ দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোই টনসিল। ৪ বছর বয়স থেকে ৮-১০ বছর বয়স পর্যন্ত টনসিল বড় থাকে। ১২ বছরের দিকে ছোট হয়ে আসে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শিশুর মুখ ও নাক হয়ে রোগজীবাণু যাতে শরীরের ভেতরে যেতে না পারে, সে জন্য গলার চারপাশে আংটির মতো টনসিল অবস্থান করে। কিন্তু কখনো কখনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মতো অণুজীব এদের আক্রমণ করে বসে। একে টনসিলাইটিস বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রদাহ হয় ভাইরাসের সংক্রমণে।

টন‌িলের প্রদাহ হলে বোঝার উপায়

খাবার খাওয়ার ও তরল পানের সময় ব্যথা লাগে। সঙ্গে নিচের যেকোনো একটি উপসর্গ থাকতে পারে:

  • ১০০ দশমিক ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রার জ্বর।
  • গলার পাশের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
  • টনসিলের ওপর হলুদ বা সাদা আস্তরণ।
  • গ্রুপ এ-বিটা হিমোলাইটিস, কালচার পজিটিভ।

চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

  • জিব সামান্য নিচে চেপে ধরে টনসিল দুটো ভালোভাবে পরীক্ষা করে স্ট্রেপ থ্রোট কি না বুঝতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
  • নাক, কান, বুক, গলা পরীক্ষা করে আর কোথাও সংক্রমণ আছে কি না, দেখতে হবে।
  • স্ট্রেপ থ্রোট হলে টনসিল খুব লাল দেখায়। তখন চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করতে হবে।
  • ভাইরাসজনিত টনসিলের প্রদাহে শিশুকে লবণ-পানির কুলকুচি করানো যেতে পারে। গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে দেওয়া যেতে পারে। স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। এ সমস্যা সপ্তাহখানেকের মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে না।
  • টনসিলাইটিস হলে বেশি বেশি তরল খাবার ও পানীয় পান করতে হবে। গিলতে সমস্যা হলে স্যুপ, নরম করে রান্না করা খাবার গ্রহণকরা উচিত।
  • শিশু বছরপ্রতি কমপক্ষে পাঁচবার করে টানা

দুই বছর, অথবা বছরপ্রতি কমপক্ষে তিনবার করে টানা তিন বছর টনসিলের সমস্যায় ভুগলে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ও শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

সাবেক বিভাগীয় প্রধান

শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ,

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল